আজ

  • সোমবার
  • ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর বেড়ি বাঁধে ভাঙন, ৮ গ্রাম প্লাবিত

  • নিজস্ব প্রতিনিধি
  • টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী-কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ফুলগাজী উপজেলায় মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের দুটি স্থান ভেঙে ৮টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয়রা ভাঙন কবলিত এলাকায় ত্রাণ সাহায্য চান নয়, বাঁধের স্থায়ী সমাধান হোক, এটাই তাদের দাবি।

    সোমবার (২০ জুন) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুরের একটি স্থানে মুহুরী নদীর বাঁধ ভাঙা। সেখান দিয়ে পানি ঢুকে উত্তর দৌলতপুর, মধ্যম দৌলতপুর ও দক্ষিণ দৌলতপুর, কিসমত ঘনিয়ামোড়া, বরইয়ার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

    দেড়পাড়ায় বাঁধের একটি স্থান ভেঙে নিলক্ষী, উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ শ্রীপুর, ঘোসাইপুর গ্রামের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানির তোড়ে এসব গ্রামগুলোর অনেক ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুকুরের মাছ ও বীজতলা।

    স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছরে বর্ষায় অতিবর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এসব স্থানের নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। নদীর পানি গ্রামের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লে গ্রামবাসীর ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। ঘরবাড়ি, শত শত পুকুরের মাছ ও ফসল পানির তোড়ে ভেসে যায়।

    তাদের অভিযোগ, প্রতি বছর ভাঙনের পর জায়গাগুলো নামমাত্র মেরামত করা হয়। কিন্তু বাঁধের স্থায়ী সমাধান হয় না। তাদের দাবি, নদী শাসনের মাধ্যমে সংস্কার করা হলেই এ ভাঙন রোধ সম্ভব হবে। স্থানীয়রা ভাঙন কবলিত এলাকায় ত্রাণ সাহায্য চান না। বাঁধের স্থায়ী সমাধান হোক, এটাই তাদের দাবি।

    জানা গেছে, পরশুরাম-ফুলগাজী-ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে ফেনী-১ সংসদীয় এলাকা গঠিত। প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষের বাস এ জনপদে। প্রতিবেশী ভারত হতে উৎস মুহুরী নদী প্রবাহিত হয়েছে এই তিন উপজেলার বুক চিরে। বর্ষায় চির যৌবনা এ মুহুরী নদীর করাল গ্রাসে বানভাসি মানুষের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সর্বনাশা বন্যায় সৃষ্ট নদীর ভাঙনে অবহেলিত এ জনপদের ধান পানিতে তলিয়ে যায়।

    স্থানীয়রা জানান, মুহুরী নদী শাসন, অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের মাধ্যমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন বন্ধসহ সিলোনিয়া, কহুয়া ও গথিয়া নদী ও খালের প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুনঃখনন করা সময়ের দাবি।

    পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন জানান, বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বাঁধের ২১টি ঝুঁকিপূর্ণ অংশ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দ দিলে সেগুলো সংস্কার করা হবে।

    বাঁধ ভাঙার বিষয়ে আকতার হোসেন জানান, পূর্বে বাঁধের যেসব স্থানে ভাঙন দেখা গিয়েছিল, সেসব স্থানে ভাঙার আশঙ্কা নেই। গত বছর ১২২ কিলোমিটার এ বাঁধটির ২৫টি স্থানে ভেঙেছিল। এ দীর্ঘ বাঁধের যেকোনো স্থানেই ভাঙতে পারে। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫ হাজার জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।

    ফুলগাজী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, ফুলগাজীতে নিলামের মাধ্যমে নদীর বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে নদীর পলি মাটি সরে গিয়ে যেকোনো স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া নদীর সরু পথ প্রশস্ত না করা ও বাঁশঝাড় না কাটলে নদী গতিপথ পরিবর্তন করলে ভাঙন রোধ অসম্ভব হয়ে পড়বে।

    ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিম বলেন, প্রতি বছর বন্যা হয় আর ত্রাণ বিতরণ করে আমরা সময় পার করি। কিন্তু বাস্তবসম্মত নদীর ভাঙন রোধে কোনো কাজে আসে না।

    পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতাকে দায়ী করে আবদুল আলিম বলেন, নদীর সংস্কার ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা সময়ের দাবি।

    পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন বলেন, মুহুরী-কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা হবে। বাঁধ নির্মাণে একটি প্রকল্প পাস হয়েছে বলেও তিনি জানান।

    ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090